চাকরির পাশাপাশি করা যায় এমন পাঁচটি ব্যবসা।

আমরা অনেকেই চাকরি করে যে অর্থ উপার্জন করি তাতে হয়তো সম্পূর্ণ চাহিদা পূরণ করতে পারিনা, আবার অনেকে নটা ছটা ডিউটির  পরে কিছু সময় তাদের হাতে থাকে সেটাকে কাজে লাগাতে চান। আজকের এই প্রতিবেদনে আমি আপনাকে জানাবো চাকরির পাশাপাশি আপনি শুরু করতে পারেন এমন কিছু ব্যবসার সন্ধান। নটা ছটার চাকরির সময় কাটিয়ে অনেকটা সময় যাদের হাতে থেকে যায় তারা অনেকেই চান এই সময়টাকে কাজে লাগাতে, আরো কিছু অর্থ উপার্জন করার সুযোগ অনেকেই খোঁজেন। অনেক চাকরিজীবী চান এমন কিছু ব্যবসার সন্ধান যেখান থেকে অতিরিক্ত কিছু অর্থ উপার্জন করা যায়। আমি সেরকম কিছু ব্যবসার সন্ধান আপনাদের জন্য নিয়ে এলাম যদি ভালো লাগে আমাদের ব্লগ টি কে ফলো করতে ভুলবেন না আর অতি অবশ্যই আপনার মূল্যবান কমেন্ট করে আমাদের প্রতিবেদনগুলো কেমন লাগছে জানাতে ভুলবেন না। চলুন দেখে নেই চাকরির পাশাপাশি করা যায় এমন পাঁচটি ব্যবসা।


    এল.আই.সি.এজেন্ট: 

    আপনি যদি ১২+ পাস করে থাকেন তাহলে আপনি এই কাজটি শুরু করতে পারেন. অনেক এল.আই.সি. এজেন্ট শুধুমাত্র এই কাজ করে নিজের জীবন সাচ্ছন্দে  কাটাচ্ছেন  কিন্তু যেহেতু আপনি চাকরির পাশাপাশি এই কাজটি করবেন সেতু আপনি পুরো সময় দিতে পারবেন না, তাতে কোন ক্ষতি নেই,  যদি আপনি সঠিকভাবে কাজ করতে পারেন তাহলে  প্রতি মাসে অতিরিক্ত অনেকখানি টাকা উপার্জন করার সুযোগ আপনি পাবেন।এল.আই.সি. এজেন্ট হয়ে আপনার পরিচিতি বাড়াতে হবে। প্রতিদিন অফিস এর পর অতিরিক্ত সময়টি আপনাকে এই কাজে সময় দিতে হবে। বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে আপনাকে সাক্ষাৎ করতে হবে এবং তাদেরকে এল.আই.সি. সম্পর্কে জানাতে হবে। যেহেতু আপনি চাকরিজীবী মানুষ তাই ধরে নিলাম রবিবার আপনার ছুটি থাকে। এই রবিবার আপনি একটি মিটিং অ্যারেঞ্জ করতে পারেন, যেখানে আপনি এল.আই.সি. পলিসি নিয়ে সকলকে জানাবেন। এই পদ্ধতিতে আপনি প্রচুর এল.আই.সি. কাস্টমার পেতে পারেন। এছাড়াও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আপনি আপনার পরিচয় বাড়াতে পারেন। মাথায় রাখবেন একজন এলআইসি এজেন্ট এর পরিচিতি মুখে মুখে অনেকটাই বেড়ে যায়। আপনার কোন কাস্টমার ভালোভাবে স্যাটিসফাই হলে সে তার অন্য অন্য বন্ধু বান্ধব পরিচিতদের মধ্যে এলআইসির জন্য আপনাকে রেফার করবে। তাই সঠিক তথ্য দিয়ে এবং সুন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত মানুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে যেতে হবে। কিছুদিন দারুণভাবে কাস্টমার বেল্ট আপনি যদি বাড়াতে পারেন একটা সময় দেখবেন আপনাকে আর তেমনভাবে খাটতে হচ্ছে না। আপনার পুরনো ক্লায়েন্টদের প্রিমিয়াম থেকেই আপনার যথেষ্ট ভালো একটি ইনকাম তৈরি হচ্ছে। একজন চাকরিজীবী মানুষের পক্ষে এলআইসি এজেন্ট হয়ে কাজ করা একটি বুদ্ধিমানের কাজ।


    ফ্রিল্যান্সার: 

    আপনার যে বিষয়ে দক্ষতা আছে সেই বিষয় কে কাজে লাগিয়ে আপনি আপনার অতিরিক্ত সময়ে  ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করতে পারেন। বা আপনি যদি কিছু সফটওয়্যার যেমন ফটোশপ, অটোক্যাড, এনিমেশন সফটওয়্যার, এডিটিং সফটওয়্যারের কাজ জানেন বা শিখে নিতে পারেন তাহলে আপনি ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করতে পারেন। শুধু এইগুলোই নয় এছাড়াও বহু কিছু আছে যা শিখতে পারেন  বা আপনি যে কাজ জানেন তা নিয়ে যদি আপনি অনলাইন দুনিয়ার দরজা ঠক ঠকান  দেখবেন প্রচুর মানুষ এই কাজগুলোর জন্য আপনার মত মানুষকে খুঁজে। আপনি তাদের জন্য এই কাজগুলো করে দিলে আপনি একটি মোটা অংকের টাকা উপার্জন করতে সক্ষম হবেন। একজন ওয়েব ডেভলপার দিনে মাত্র 2 থেকে 3 ঘন্টা এরকম কাজ করে প্রচুর টাকা ইনকাম করতে সক্ষম হন। ফ্রিল্যান্সার হিসাবে কাজ করা একটি বুদ্ধিমানের কাজ কারণ চাকরির পাশাপাশি আপনার পরে  থাকা সময়টিকে এভাবে ব্যয় করতে পারলে আপনি অতিরিক্ত যথেষ্ট টাকা উপার্জন করতে সক্ষম হবেন। প্রথমে খুঁজে বার করুন আপনি কি কি কাজ দারুণভাবে জানে। অনলাইন দুনিয়ায় সব ধরনের কাজের মানুষের প্রচুর চাহিদা। ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করা যায় এমন বেশ কিছু সাইট অনলাইনে আপনি পেয়ে যাবেন যেমন fiber.com, freelancer.com, upwork.com ইত্যাদি


    প্রাইভেট টিউটর: 

    চাকরির পাশাপাশি আপনি প্রাইভেট টিউটর হিসেবে কাজ করে অতিরিক্ত টাকা ইনকাম করতে সক্ষম হতে পারেন। বর্তমানে অফলাইন ও অনলাইনে শিক্ষকের চাহিদা প্রচুর । একজন ইংলিশ মিডিয়ামের প্রাইভেট টিউটর শুধুমাত্র সাইন্স গ্রুপ পড়াবার জন্য আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত ডিমান্ড করে থাকেন। আপনি যদি ইংলিস টিচার হিসাবে সায়েন্স গ্রুপের একটি 6 জনের ব্যাচ তৈরি করতে পারেন তাহলে আপনি একটি ব্যাচ থেকে 15 থেকে কুড়ি হাজার টাকা মাসে ইনকাম করতে পারবেন। যেহেতু আপনি চাকরিজীবী তাই ৭ টার পর থেকে রাত দশটা পর্যন্ত আপনি দুটি ব্যাচ চালাতে পারবেন এতে আপনি 25 থেকে 30 হাজার টাকা অতিরিক্ত ইনকাম করতে সমর্থ হবেন। শুধু তাই নয় আপনি  যদি পড়াশোনার বাইরে ও ডান্স, গিটার, ড্রয়িং ইত্যাদির মত সাবজেক্ট এ কাজ করেন তাহলেও  আপনি যথেষ্ট ভালো একটি অতিরিক্ত ইনকাম উপার্জন করতে সমর্থ হবেন।তবে মাথায় রাখতে হবে অন্যদের থেকে কিছু আলাদা করতে হবে। অনলাইন ও অফলাইন দুটিতেই ক্লাস করাবার চেষ্টা করতে হবে। মানুষ অভিনবত্ব পছন্দ করে তাই কিছু অভিনবত্ব এই ব্যবসাতে আনতে পারলে আরো তারাতারি উন্নতি করতে পারবেন। 


    ডিজিটাল মার্কেটিং: 

    আপনি আপনার অতিরিক্ত সময়কে  অন্যের কোম্পানির প্রচার এবং প্রসার এর জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং এর কাজ করতে পারেন। অনলাইন দুনিয়ার যেভাবে বিপ্লব ঘটেছে সেখানে দাঁড়িয়ে প্রতিটি ছোট বড় ব্যবসায়ী এখন অনলাইনে আসতে চাইছেন। অনেকেই কিভাবে অনলাইনে মার্কেটিং করতে হয় বা নিজের ব্যবসা কে অনলাইনে কিভাবে প্রতিষ্ঠা করতে হয় সে ব্যাপারে ওয়াকিবহাল নয়, এই দূর্বলতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আপনি অন্যের হয়ে অনলাইন মার্কেটিং ও ব্র্যান্ড প্রচার ও কোম্পানির প্রসারে  সহযোগিতা করতে পারেন বিনিময় প্রতিমাসে তাদের কাছ থেকে বেশকিছু অর্থ উপার্জন করতে সক্ষম হবেন। যদি আপনি অনলাইন মার্কেটিং সম্পর্কে কিছুই না জানেন তাহলে আপনি ছোটখাটো কোর্স করে নিতে পারেন। এগুলি আপনি বিনা পয়সায় অনলাইন থেকে শিখেও করতে পারেন অথবা অনেক কোর্স আছে যা অল্প পয়সায় আপনাকে এগুলো শিখতে সাহায্য করবে। আগামী দিনগুলোতে  অনলাইন মার্কেটিং আরো প্রয়োজনীয় হয়ে পড়বে ব্যবসায়ীদের কাছে। আপনি অনলাইন মার্কেটিং শিখে বেশ মোটা অংকের অর্থ উপার্জন করতে পারেন। একজন চাকরিজীবীর কাছে অতিরিক্ত সময় কে এইভাবে ব্যয় করা একটি বুদ্ধিমানের কাজ বলে আমি মনে করি। এই অনলাইন মার্কেটিং একটি অনেক বড় সাবজেক্ট। একটু আগ্রহ নিয়ে শিখতে পারলে এবং এই বিষয়ে যদি আপনি পারদর্শী হয়ে ওঠেন তাহলে আপনার ক্লাইন্ট এবং অর্থের অভাব কখনোই হবে না।


    ডকুমেন্ট ম্যানেজমেন্ট: 

    ডকুমেন্ট ম্যানেজমেন্টের কাজ আপনি করতে পারেন। এটি কি রকম কাজ? আপনার কাছে যদি একটি কম্পিউটার আর ইন্টারনেট লাইন থাকে তাহলে একটি প্রিন্টার কিনে নিয়ে আপনি এই কাজ শুরু করতে পারেন। আপনার চাকরি করার পরে যে তিন থেকে চার ঘণ্টা আপনার হাতে থাকছে সেইটুকু টাইম ব্যয় করে আপনি এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন। এখানে আপনি আধার কার্ড লিঙ্ক করার কাজ, নতুন প্যান কার্ড তৈরি করা, সিডিউল কাস্ট সার্টিফিকেট করার মতো কাজ, ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরি করার কাজ, নতুন পাসপোর্ট অ্যাপ্লাই করার কাজ, ফর্ম ফিলাপ করার মত কাজ এরকম অসংখ্য কাজ আপনি করতে পারেন। অধিকাংশ মানুষ তার ডকুমেন্ট ঠিক করার জন্য নাজেহাল হয়ে এখানে সেখানে ঘুরে বেড়ায়। এই কাজটি আপনি খুব কম সময় দিয়ে শুরু করতে পারেন। এই কাজটির মাধ্যমে প্রতিদিন আপনি অল্পবিস্তর ভালোই আয় করতে পারবেন। অনেক দোকানদার আছে যারা শুধু এই বিষয়গুলোর উপর এই কাজ করে থাকে। আপনি যদি আপনার এই কাজটি অনলাইনে প্রচার ও প্রসার করতে পারেন তাহলে আপনার আয় অনেকখানি বেড়ে যাবে। যদি এই ফর্ম  ফিলাপ করার কাজগুলি বা নতুন ডকুমেন্ট করার কাজগুলি আপনি না জানেন তাহলে খুব অল্প সময় দিয়ে প্রথমেই ইউটিউব থেকে এই কাজগুলি ভাল করে শিখে নিন। চাকরির পড়ে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করে এই ব্যবসাটি একটি দারুণ ব্যবসা এবং এখান থেকে যথেষ্ট ভালো উপার্জন করতে আপনি সক্ষম হবেন।


    চাকরির পরে অতিরিক্ত সময়ে করা যায় এমন পাঁচটি ব্যবসার ধারনা আমি আপনাদেরকে দিলাম। এই বিষয়গুলি ছাড়াও আরো অসংখ্য বিষয়ে কাজ করা যায়, সেগুলো সম্পর্কে আমি পরবর্তী কোন পোস্টে নিয়ে আসব। উপরুক্ত এই ব্যবসা গুলি করার আগে মাথায় রাখবেন যে বিষয়ে আপনি কাজ করতে চাচ্ছেন সেই বিষয়গুলি সম্পর্কে ভালোভাবে শিখে নিন। প্রথম থেকেই আপনার কাজগুলো সম্পর্কে মানুষকে জানাতে থাকুন, এতে আপনার কাস্টমারের সংখ্যা বাড়তে থাকবে। প্রথমদিকে কম কাস্টমার হলে হতাশ হবেন না, ধৈর্য ধরে করে যেতে পারলে হয়তো এই ব্যবসা গুলি আপনাকে আপনার চাকরি থেকে বেশি টাকা উপার্জন করে দিতে সক্ষম হবে। প্রতিবেদনটি ভালো লাগলে আমাদের ব্লগ কে ফলো করতে ভুলবেন না আর কমেন্ট করে আপনার মূল্যবান কথাগুলি আমাদের অবশ্যই জানাবেন ধন্যবাদ।

    আরো পড়ুন 

    পাঁচটি হোলসেল ব্যবসার আইডিয়া।

    কিভাবে ডোমিনোজ পিৎজার ফ্রাঞ্চাইজি নেওয়া যায়।

    অনলাইন ব্যবসা কি ও অনলাইন ব্যবসা করার অসুবিধা গুলি কি কি?

    কিভাবে একটি টি-শার্ট তৈরির ব্যবসা চালু করবেন ?

    বিনা ইন্ভেসমেন্টে ৫ টি দারুন লাভজনক ব্যবসা।

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    নবীনতর পূর্বতন