নিজের একটি ব্যবসা সুরু করা আমাদের অনেকের স্বপন। কিন্তু কিব্যবসা শুরু করবো ? কতটাকা ইনভেস্টমেন্ট লাগবে?ব্যবসা সফলভাবে চালাতে পারবো কি না? এরকম হাজার প্রশ্ন আমাদের মাথায় আসে। সহজে ব্যবসা করার জন্য আমরা প্রতিনিয়ত কিছু-না-কিছু ব্যবসার আইডিয়া খুঁজতে থাকি। আমরা সকলেই চাই একটা সহজ সরল অথচ লাভজনক ও অল্প কিছু পুঁজি দিয়ে ভালো কিছু ব্যবসা শুরু করতে। আজকের প্রতিবেদনে তেমনি একটি সহজ সরল অথচ অতি লাভজনক ব্যবসা সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
টি-শার্ট ম্যানুফ্যাকচারিং ব্যবসা একটি অতি লাভজনক ব্যবসা, অনেকেরই মাথায প্রশ্ন আসে কিভাবে একটি টি-শার্ট ম্যানুফ্যাকচারিং এর ব্যবসা শুরু করা যায়। শুরুতেই আমি বলে রাখি টি শার্ট তৈরি করার ব্যবসা একটি অতি লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া। অনেক নতুন কোম্পানি আছে যারা বর্তমানে টি শার্টের উপর ব্যবসা করে মাসে কোটি কোটি টাকা ইনকাম করছে। "bewakoof.com" নামটা অনেকেরই জানা। "bewakoof.com" বর্তমানে ভারতবর্ষের একটি অতিপরিচিত ব্র্যান্ড যারা টি শার্টের উপর ব্যবসা করে থাকে এবং প্রতিমাসে কোটি কোটি টাকার রেভিনিউ জেনারেট করছে। এরকম আরো অনেক কোম্পানি আছে যেমন "the souled store","beyoung" এরকম অসংখ্য উদাহরণ আছে যারা শুধুমাত্র টি-শার্ট এর উপর কাজ করে একটা কোটি টাকার স্টার্টআপ দাঁড় করিয়েছে। ভারতবর্ষে টি শার্ট প্রিন্টিং এর মার্কেট প্রায় 55 কোটি টাকার বড় একটি মার্কেট।দেশ ও দেশের বাইরে এই পণ্যের চাহিদা প্রচুর। তাই এই ব্যবসা শুরু করা একটি বুদ্ধিমত্তার কাজ হবে।
আজ আমরা এই প্রতিবেদনে টি-শার্ট মেকিং এর ব্যবসা সম্পর্কে জানব। জানব কিভাবে একটি স্টার্টআপ দাঁড় করানো যায় এবং এর জন্য কি কি প্রয়োজন ও কিভাবে প্রচার ও প্রসার করব।
বিজনেস :
টি-শার্ট ম্যানুফ্যাকচারিং বিজনেস এর ক্ষেত্রে বিজনেস মডেল ভালো করে বুঝে নেওয়া প্রথমেই জরুরী। এই বিজনেস মডেলকে আমরা তিন ভাগে ভাগ করে নিতে পারি প্রথমত সোর্সিং, দ্বিতীয়ত ডিজাইনিং ও তৃতীয়ত প্রিন্টিং।

সোর্সিং:সোর্সিং বলতে প্রথমেই আপনাকে খুঁজে বার করতে হবে টি শার্ট তৈরির জন্য র-মেটিরিয়ালস কোথা থেকে পাওয়া যায় বা টি শার্ট তৈরি করার জন্য যে র-মেটিরিয়ালস গুলি প্রয়োজন সেগুলি সবথেকে সস্তায় কোথা থেকে পেতে পারি।
ইন্ডিয়াতে টি-শার্টের মেটেরিয়াল সোর্সিং মূলত কলকাতা, মুম্বাই এবং ত্রিপুরা থেকে হয়ে থাকে।সেই সকল কাপড় মেনুফ্যাক্টরকে প্রথমেই একটি লিস্ট করে নিতে হবে। একটু রিসার্চ করলেই আপনি দেশের বাইরের আরো কিছু টিশার্ট কাপড়ের সেলার পেয়ে যাবেন। এই কাপড়ের গুনগত মান যেন উন্নত হয় অথচ কত কম দামে আপনি তা জোগাড় করতে পারছে সেবিষয়ে নজর রাখতে হবে। এবার সে সব ফ্যাক্টরি থেকে এর সোর্সিং আপনাকে করতে হবে।সুদু কাপড় নয় ,সেলাইর সুতো, কলার ও হাতার রিবন,বেতন ইত্যাদি র-মেটিরিয়ালস সোর্সিং ঠিকঠাক করতে পারলে এরপর আপনাকে দ্বিতীয় পদক্ষেপ নিয়ে কাজ করতে হবে।
ডিজাইন: টি-শার্টে ডিজাইন খুবই ইমপোর্টেন্ট একটি বিষয়। এবিষয়ে আগেথেকেই আপনাকে সতর্ক হতে হবে। কোন ডিজাইন মার্কেটে চলবে এবং কোন ডিজাইন মার্কেটে চলবেনা সেটি আপনি জানেননা তাই বিভিন্ন ডিজাইন নিয়ে আপনাকে পরীক্ষা চালাতে হবে। মানুষ কোন কোন ডিজাইন বেশি পছন্দ করছে তার একটি লিস্ট বানাতে হবে তারপর ফাইনাল ডিজাইন নিয়ে এগোতে হবে।
যদি আপনি গ্রাফিক্সের কাজ জানেন তবে টি-শার্টের জন্য আপনি ডিজাইন নিজেও বানাতে পারেন আবার বাইরে থেকে ডিজাইনার ভাড়া করতে পারেন। এছাড়াও অনেক ফ্রি ডিজাইন আপনি ইন্টারনেটে পেয়ে যাবেন তবে আমি বলবো অল্প কিছু পয়সা খরচ করে আপনি ডিজাইন কিনে নিলেই ভালো হয়। অনেক ডিজাইনার আছে যারা আপনার হয়ে ফ্রিল্যান্সার হিসাবে কাজ করে দিতে পারে, তাদের সঙ্গে আপনি যোগাযোগ করতে পারেন।
টি-শার্ট ব্যবসার ক্ষেত্রে টি শার্টের ডিজাইন মূল কথা। এটি কিন্তু আকর্ষণের মূল বিষয়। অনেকেই একটি বিষয় বেছে নেয় যে বিষয়ের উপর টি শার্ট তৈরি করে থাকে। যেমন অনেকেই বলিউড ফিল্মের ডায়লগ লিখে টি-শার্ট তৈরি করেন আবার অনেকে কাটুন ফিগার আঁকা টি শার্ট তৈরি করে থাকেন। অনেক সময় দেখবেন সুন্দর সুন্দর বাংলায় লেখা কথা দিয়ে টি শার্ট তৈরি হয়। মূল কথা একটি আকর্ষক বিষয় আপনাকে ধরে নিতে হবে এবং সেই বিষয়ে আপনাকে টি শার্ট তৈরি করতে হবে। কোন ডিজাইন মানুষ সব থেকে বেশি পছন্দ করবে এটা কিন্তু বোঝা বড় কঠিন কাজ তাই অনেক রকম ডিজাইন তৈরি করে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আপনি একটি প্রচার বা ভোট চালাতে পারেন। এখান থেকে আপনি বুঝে যাবেন বেশিরভাগ মানুষ কোন ধরনের ডিজাইন পছন্দ করছে। একবার ডিজাইন ঠিক হয়ে গেলে প্রিন্টিং নিয়ে কাজ করতে হবে।
প্রিন্টিং:টিশার্ট প্রিন্টিং আপনি নিজেও করতে পারেন আবার অন্ন প্রিন্টিং হাউস থেকে করিয়ে নিতে পারেন। নিজে প্রিন্টিং করলে প্রথম দিকে প্রিন্টিং মেশিনের জন্য খরচাটা একটু বেশি পরে যাবে কিন্তু প্রতিটি টিশার্ট পিছু প্রিন্টিং কোস্ট কমে যাবে। আর বাইরে থেকে প্রিন্টিং করতে চাইলে -
অনেক প্রিন্টিং স্টার্টআপ আছে তাদের সঙ্গে কন্টাক করতে হবে । বাইরে থেকে প্রিন্টিংয়ের কাজ করিয়ে নিলে আপনার কাজ অনেকটাই হালকা হয়ে যাবে। নিজেই প্রিন্টিং করবেন নাকি বাইরে থেকে করবেন এটি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আপনার পুঁজির ওপর। ভারতের প্রত্যেকটি মেট্রো শহরে টি শার্ট প্রিন্টিং এর স্টার্টআপ আপনি একটু খোঁজ করলেই পেয়ে যাবেন। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। প্রত্যেকটি প্রিন্টিং হাউসের রেট জেনেনিন এবং কাজ নিজের চোখে দেখে নিন। যে প্রিন্টিং হাউস আপনার ভালো লাগবে তাদের সঙ্গে কাজ শুরু করতে পারেন।
কোথায় বিক্রি করবো ?
এত পর্যন্ত আমরা জানলাম কিভাবে আমাদের প্রোডাক্টটি তৈরি করতে হবে। প্রডাক্ট রেডি হয়ে গেলে এবার আমরা কোথায় কোথায় তা বিক্রি করতে পারব সে সম্পর্কে জানব। প্রথমেই বেছে নিতে হবে নামকরা ই-কমার্স সাইট গুলি কে। প্রত্যেকটি ই-কমার্স সাইটে রেজিস্ট্রেশন করে আপনার প্রোডাক্ট গুলিকে লিস্টেড করে দিতে হবে। পাশাপাশি আপনি নিজে আপনার ওয়েবসাইট বানিয়ে তার প্রচার করতে পারেন এবং সোশ্যাল মিডিয়ার প্রত্যেকটি সাইটে আপনাকে আপনার প্রোডাক্টের প্রচার করতে হবে।
প্রচার ও প্রসার
এবার আমরা জানবো কিভাবে আমাদের প্রোডাক্ট কে আরো বেশি ভাবে আমরা বিক্রির জন্য তৈরি করতে পারি। প্রডাক্ট কে বেশি করে বিক্রি করার জন্য আপনাকে অল্পবিস্তর ডিজিটাল মার্কেটিং শিখে নিতে হবে। ডিজিটাল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে আপনাকে কনটেন্ট মার্কেটিং, ইনফুলেন্সার মার্কেটিং, সোশ্যাল মিডিয়াতে এবং গুগলে পেড অ্যাড ইত্যাদি করতে হবে। যাতে আপনার প্রোডাক্ট আরো বেশি করে মানুষের কাছে পৌঁছে যায়, দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং বিক্রি বরে ।
প্রডাক্ট শিপিং
এ পর্যন্ত আমরা জানলাম প্রোডাক্ট তৈরি করা থেকে প্রোডাক্ট বিক্রি পর্যন্ত এবার কিভাবে প্রডাক্ট কে শিপিং করব সে বিষয়ে জানব। ভারতে অনেক বড় বড় শিপিং কম্পানি আছে যারা আপনার হয়ে এই কাজটি করে দেবে। যেমন Shiprocket, Blue Dart ইত্যাদি অনেক লজিস্টিক কোম্পানি আছে যারা আপনার হয়ে সামান্য টাকার বিনিময় এই কাজগুলি করে দেয়। তাদের সঙ্গে কন্টাক করে নিতে হবে। আর এই লজিস্টিক কম্পানি গুলি আপনার প্রোডাক্ট কাস্টমারের দরজা পর্যন্ত পৌঁছে দেবে।
ফিডবেক
বিক্রি কিন্তু শেষ কথা নয় এর পরেও অনেক কাছ থেকে যায় যেমন কাস্টমারের ফিডব্যাক নোয়া এবং ভালো ফিডব্যাক গুলি দিয়ে পুনরায় মার্কেটিং করা। বেস্ট সেলিং ডিজাইন খুঁজে বার করতে হবে যাতে তাকে বেশি প্রোডাক্ট আগে থেকেই তৈরি করে রাখা যায়। আর খারাপ ফিডব্যাক থেকে আপনাকে বারবার সংশোধন করে যেতে হবে। যে সকল কাস্টমার আপনার প্রোডাক্ট কিনেছে বা ইনকোয়ারি করেছে তাদেরকে বারবার নোটিফিকেশন পাঠাবার ব্যবস্থা করতে হবে। নোটিফিকেশন আপনি বিভিন্ন চ্যানেল থেকে করতে পারেন যেমন হোয়াটসঅ্যাপ, এসএমএস, ইমেইল ইত্যাদি।কিছু কথা মাথায় রাখতে হবে, কাস্টমার কিন্তু টি-শার্ট কেনে না, টি শার্টের ওপর প্রিন্ট করা কনটেন্ট কেনে । তাই ভাল কনটেন্ট এবং ভালো ফেব্রিক নিয়ে যদি আপনি একটি টি শার্ট তৈরির ব্যবসা শুরু করতে পারেন এটি একটি অতি লাভজনক এবং দারুণ একটি স্টার্টাপের পরিচয় দেবে।
টি-শার্টের গুণমান ভালো করতে কোন কোন দিকে নজর রাখবেন ?
আরামদায়ক ফিট :- টি-শার্ট পরে কতটা কমফর্টেবল তা দেখতে হবে। কাপড় কতটা আরামদায়ক সেটিও দেখতে হবে। প্রতিনিয়ত ভালো কাপড়ের খোঁজ রাখতে হবে। কাস্টমার টি শার্ট পরে কমফর্টেবল ফিল না করলে সেকেন্ড টাইম আর কিনবে না। এতে আপনার রিপিড কাস্টমার কমে যাবে আর ব্যবসার ক্ষতি করবে।
আকারের নির্ভুলতা :- S,M,L ও অন্নান সকল সাইজ যেন নির্ভুল হয়। মাথায় রাখবেন বিভিন্ন দেশ অনুসারে এই সাইজের পার্থক্য হয়ে যায়। বিদেশে বিক্রি করার আগে সেদেশের সাইজ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেনিতে হবে। সাইজ যত নির্ভুল হবে টি-শার্ট-এর গুণমান ভালো হবে।
সেলাই গুণমান:- টি-শার্ট সেলাই ও গুণমান-এর দিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে। সুতো আর সেলাই দুটি বিষয়ে নজর রাখতে হবে। ভালো মানের সুত দিয়ে সেলাই করলে টি শার্টের টেকসই অনেকটাই বেড়ে যাবে আর এতে আপনার গুডউইল বাড়বে। এগুলি ছোট ছোট বিষয় হলেও খুবই জরুরি।
কুয়ালিটি চেকিং:- ফাইনাল প্রডাক্ট পেকেজিং এর আগে কুয়ালিটি চেকিং করতে হবে। যাতে সামান্যতম ভুল প্রডাক্ট কাস্টমারের কাছে না যায়। প্রয়জনে কুয়ালিটি চেকিংএর জন্য একজন বেক্তিকে নিযুক্ত করুন।
সবার শেষে কিছু কথা :
* খুব সহজেই ধৈয্য হারাবেননা। সফলতা আসতে একটু সময় নেয়।আপনার প্রডাক্ট যদি ভালো হয় এবং ভাইরাল হয় তাহলে সহজেই সফলতা আসতে বাধ্য।
* প্রতিমাসে লাভের একটি অংশ প্রচারের জন্য খরচা করুন। সোশ্যাল মিডিয়া ও গুগলে নিয়মিত এড চালিয়ে যেতে হবে। প্রয়জনে যারা শর্ট ভিডিও বানায় এমন জনপ্রিয় শিল্পীদের দিয়ে প্রচার চালাতে থাকুন।
* প্রডাক্টের গুনগতমানের দিকে নজর রাখুন। ভালো র-মেটেরিয়াল দিয়ে কাজ করে যান যাতে গুনগত মান ঠিক থাকে।
* নতুন নতুন ভাবনাকে ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত করুন।প্রতিনিয়ত নতুন ডিজাইন করতে হবে আর মার্কেটিং করে জানতে হবে কাস্টমারের পছন্দের ডিজাই কোনগুলি।
* প্রতিনিয়ত আপনি নিজেকে আপটুডেট করতে থাকুন। নতুন ভাবনাকে জায়গা করতে দিন।
ধন্যবাদ।
আরো পড়ুন
বিনা ইন্ভেসমেন্টে ৫ টি দারুন লাভজনক ব্যবসা।
১০ হাজার টাকায় ১০ টি লাভজনক ব্যবসার সন্ধান
কিভাবে app নির্ভর একটি টেক্সী ব্যবসা শুরু করবেন।
অল্প টাকা বিনিয়োগ করে প্রচুর টাকা ইনকাম করার ৫ টি সন্ধান।
জামাকাপড়ের ব্যবসা কিভাবে শুরু করবেন ?
ভালোলাগলে সাবস্ক্রিব ও শেয়ার করতে ভুলবেননা।