ছাত্র অবস্থায়
করা যায় এমন পাঁচটি ব্যবসা সম্পর্কে আজকে আমি আপনাদেরকে জানাবো। আমরা অনেকেই পড়াশোনার
পাশাপাশি কিছু ব্যবসা করার ইচ্ছা রাখি কিন্তু চিন্তাভাবনা করে উঠতে পারিনা কি রকম ব্যবসা
পড়াশোনার পাশাপাশি করলে পড়াশোনার ক্ষতি হবে না এবং অর্থের যোগান ও যথেষ্ট হবে ও পাশাপাশি
একটি ব্যবসা দাঁড় করানো যাবে। এর আগে আমরা অল্প পুজিতে করা যায় এমন কিছু ব্যবসার
আইডিয়া জেনেছি এবং অনলাইনে করা যায় এমনও কিছু ব্যবসার আইডিয়া আমি আপনাদের দিয়েছি
কিন্তু আজ আমরা পড়াশোনার পাশাপাশি করা যায় এমন পাঁচটি ব্যবসার আইডিয়া আপনাদের সঙ্গে
ভাগাভাগি করে নেব। এখানে আমি এমন কিছু ব্যবসা সম্পর্কে আলোচনা করব যেটা করলে আপনি ভবিষ্যতের জন্য ভালো ব্যবসা দাঁড় করাতে পারবেন
এবং পাশাপাশি আপনার পড়াশোনাও চালিয়ে যেতে
পারবেন এবং এই ব্যবসা আপনার পড়াশোনারও উপকার
করবে। তো চলুন দেখে নি এমন কি ব্যবসা যেগুলি
পড়াশোনার ক্ষতি না করে পড়াশোনার উপকার করার পাশাপাশি একটি লাভজনক ব্যবসা হতে পারে।
আইটি ফার্ম:
যারা কমার্স
নিয়ে পড়াশোনা করছেন অথবা যারা একটু অংকে ভালো তাদের জন্য এই ব্যবসাটি উপযুক্ত। প্রত্যেকটা
দোকানদার বা যারা ব্যবসা করছেন সেটা ছোট ব্যবসা হউক বা বড় ব্যবসা, প্রত্যেকের আই টি
ফাইল করা অনিবার্য। কিন্তু অনেক দোকানদার বা ছোট ব্যবসায়ী তারা জানে না কোথা থেকে
এই আইটি ফাইল তৈরি করতে হয়। তাছাড়াও অনেকেই আই টি ফাইল করার ব্যাপারে উদাসীন। কিন্তু
ঐ সকল ব্যবসায়ী যখন লোনের জন্য প্রয়োজন হয় তখন আই টি ফাইল করার জন্য দৌড়াদৌড়ি
শুরু করেন। আপনাকে এই আই টি ফাইল এর কাজ শুরু করতে হবে। কিভাবে আই টি ফাইল এর কাজ শুরু
করবেন?
প্রথমেই আপনাকে খুঁজে বার করতে হবে কোন চার্টার অ্যাকাউন্ট বা যারা আইটি ফাইল বানিয়ে থাকেন। তাদের সঙ্গে কথা বলে আপনাকে জেনে নিতে হবে একটি আইটি ফাইল করতে কত টাকা খরচা হয় ও কিকি কাগজ পত্র লাগে । মাথায় রাখবেন আইটি ফাইল বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে, এই রকমফের নির্ভর করে ব্যবসার ধরন ও ইনকামেরে ওপর। আপনি প্রথমেই বড় কোন ব্যবসায়ীকে ধরবেন না। প্রথমদিকে ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য সাধারণ আইটি ফাইল তৈরি করা শুরু করতে হবে। আপনার অঞ্চলের মুদিখানা দোকান থেকে শুরু করে মাছওয়ালা, চাওয়ালা এদেরকে টার্গেট করুন। সাধারণ একটি আইটি ফাইল তৈরি করতে 600 থেকে ৮00 টাকা খরচা হয়। আপনি আপনার কাস্টমারের কাছ থেকে 200 টাকা এক্সট্রা রাখতে পারেন। এভাবে বেশকিছু আই টি ফাইল যখন আপনি তৈরি করতে পারবেন তখন তাদের প্রতিবছরের আইটি জমা করার দায়িত্ব আপনি নিয়ে নিন। আই টি ফাইল এর রিটার্ন প্রতিবছর জমা করতে হয়। এই দায়িত্ব আপনার কাছে থাকলে এবং আপনার পরিচিতি বাড়লে আরও বেশি লোক আপনার সঙ্গে যুক্ত হবে তাদের আই টি রিটার্ন জমা করার জন্য। এর পাশাপাশি আপনি নিজেই শিখে নিন কিভাবে আই টি ফাইল রিটার্ন জমা করতে হয়। এই আইটি ফাইল এর ফার্ম একটি অনেক বড় ব্যবসার রূপ নিতে পারে, যা আপনাকে প্রতিবছর কয়েক লক্ষ থেকে কোটি টাকা পর্যন্ত আয় দিতে পারে। এই ব্যবসা আপনার পড়াশোনার পাশাপাশি আপনি চালিয়ে যেতে পারেন এবং যদি আপনি কমার্সের ছাত্র হন এই ব্যবসা আপনার পড়াশোনার অনেকখানি উপকার করবে।
কোচিং সেন্টার:
পড়াশোনার
পাশাপাশি করা যায় এমন আরেকটি দারুণ ব্যবসা কোচিং সেন্টার। প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীরা কম
টাকাতে ভালো টিউশনি পড়তে চায়। আপনি যদি পড়াশোনাতে ভালো হন তাহলে আপনি
আপনার পড়াশোনার পাশাপাশি শুরু করতে পারেন কোচিং সেন্টারের ব্যবসা। যেহেতু করনা পিরিয়ডের পর পড়াশোনা অনেকখানি
অনলাইন ভিত্তিক হয়ে পড়েছে সেহেতু পুরনো পন্থার পাশাপাশি আপনাকে আপনার কোচিং সেন্টার কে অনেকখানি আপগ্রেড
করে চালাতে হবে। প্রয়োজনে আপনি অন্য অন্য টিচার রেখে এই কোচিং সেন্টার
কে আরো অনেক বড় ব্যবসার রূপ দিতে পারেন। একজন ছাত্রের পক্ষে কোচিং সেন্টারের ব্যবসা যথেষ্ট উপকারী তার নিজের পড়াশোনার জন্য। কথায় আছে যত জ্ঞান ছড়াবেন
তত জ্ঞান
বাড়বে। কিন্তু আপনি এই ব্যবসা করলে
জ্ঞান বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অর্থের যোগান বাড়তে থাকবে। উপযুক্ত এলাকায় উপযুক্ত বিচার নিয়ে সুন্দর পরিবেশে উন্নত প্রযুক্তির দ্বারা কোচিং সেন্টার চালাতে পারলে এটি একটি লক্ষ লক্ষ টাকার ব্যবসার রূপ নেবে।
ইউটিউব:
যদি আপনি
সোশ্যাল মিডিয়াকে এন্টারটেইনমেন্ট এর জন্য না ব্যবহার করে ব্যবসার জন্য ব্যবহার করতে
জানেন তাহলে ছাত্র অবস্থায় এটি একটি দারুন ইনকামের সোর্স হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে।
ছাত্র অবস্থায় কি কিরকম ইউটিউব চ্যানেল করা যায় যা আপনার ইনকাম এর পাশাপাশি পড়াশোনারও
উপকার করবে তা নিয়ে আপনাকে আগেভাগেই চিন্তা করে নিতে হবে। যদি আপনি ইঞ্জিনিয়ারিং
এর ছাত্র হন তো সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে আপনি দারুন একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলতে পারেন
যা আপনার পড়াশুনা এবং ইনকাম দুদিক থেকেই উপকার পাবেন। আপনি যে বিষয়ে পড়াশোনা করছেন
সে বিষয়ে একটি ইউটিউব চ্যানেল করতে পারেন। মাথায় রাখবেন টিউটোরিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে
ইনকাম অনেক বেশি। ছাত্র অবস্থায় কি কি নিয়ে ইউটিউব চ্যানেল করা যায়?
পড়াশোনার
টিউটোরিয়াল চ্যানেল করতে পারেন।দেশ বিদেশের খবর নিয়ে চ্যানেল করতে পারেন।নিউজ চ্যানেল
করতে পারেন।এনিমেশন ইত্যাদি
আপনাকে চিন্তা
করে বার করতে হবে এমন কোন বিষয় নিয়ে চ্যানেল করবেন যা আপনার পড়াশোনার উপকারে আসবে, যদি সেই সাবজেক্ট
আপনার উপকারে আসে তারমানে আপনার মত অসংখ্য ছাত্রের উপকারে আসবে। ইউটিউব থেকে হয়তো
প্রথমেই ইনকাম আসবে না কিন্তু নিয়মিত কাজ করে যেতে পারলে একসময় এখান থেকে যে পরিমাণ
আপনি অর্থ উপার্জন করতে পারবেন তা একটি বড় ব্যবসার ইনকামের সমান হবে।
ব্লগিং:
ছাত্র দের জন্য ইনকামের আরেকটি সুন্দর পথ হল ব্লগিং। ইউটিউবে একজন ছাত্র
যা জানিয়ে ভিডিও করছেন ঠিক সেই বিষয়গুলো নিয়েই আপনি ব্লগিং শুরু করতে পারেন। এখানেও
আপনি আপনার পড়াশোনা সম্পর্কে লেখালেখি শুরু করতে পারেন যা অন্য ছাত্র-ছাত্রীদের যথেষ্ট
উপকারে আসবে এবং আপনার ইনকাম যথেষ্ট পরিমাণে বেড়ে যাবে। ইউটিউব এর মত এখানেও আপনাকে
প্রতিনিয়ত কাজ করে যেতে হবে, হয়তো ইনকাম হবে না কিন্তু এক সময় যে ইনকাম আসবে সেই ইনকাম একটি বড় ব্যবসার ইনকামের সমান হতে পারে।
মাথায় রাখবেন অনেক ইউটিউবার এবং ব্লগার মাসে 1 থেকে 10 লক্ষ টাকা পর্যন্ত ইনকাম করে
থাকে। আর আপনি যদি আপনার পড়াশোনার বিষয়বস্তু নিয়ে ব্লগিং শুরু করেন এটি আপনাকে শুরু
থেকেই আপনার পড়াশোনায় সাহায্য করবে এবং ভবিষ্যতে একটি দারুণ ব্যবসার রূপ নিতে পারবেন।
একবার আপনার ব্লগ পপুলারিটি পেয়ে গেলে আরো অন্য অন্য পথ আপনার কাছে খুলে যাবে , যেমন
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, ব্র্যান্ড প্রমোশন ইত্যাদি
নার্সারি:
যদি আপনার
কাছে সামান্য জায়গা থাকে বা ছোটখাটো বাড়ির ছাদ থাকে তাহলে আপনি পড়াশোনার পাশাপাশি
নার্সারির ব্যবসা শুরু করতে পারেন। বিভিন্ন
প্রজাতির ফুল ও ফল গাছ আপনি টবে তৈরি করে সেগুলিকে
বিক্রি করতে পারেন। এই নার্সারির জন্য যথেষ্ট সময়ের দরকার হয় না শুধু দরকার গাছ লাগানো
এবং পরিচর্যা সম্পর্কে শিক্ষার, যা আপনি সহজে ইউটিউব থেকে পেয়ে যেতে পারেন। যদি আপনার
কালেকশনে কিছু নামী দামি গাছ ও নামিদামি ফুল গাছ থাকে তাহলে আরো ভালো হয়। আপনি আপনার
এলাকার বাজার অঞ্চলে নিজে বা অন্য কাউকে দিয়ে ওই গাছগুলি বিক্রি করাতে পারেন এর পাশাপাশি
অনলাইনে এর মার্কেটিং করতে পারেন। প্রচুর মানুষ সুন্দর ভালো এবং উন্নত মানের গাছ কিনতে
ভালোবাসেন তাদের কাছে একবার যখন আপনার পরিচিতি বেড়ে যাবে তখন দেখবেন আপনার ব্যবসা
ও ধীরে ধীরে বড় হতে শুরু করেছে। এর পাশাপাশি আপনি যদি গাছের বিচ, সার, কীটনাশক ইত্যাদি
অনলাইন ও অফলাইনে বিক্রি করতে পারেন তাহলে আরও দ্রুত আপনি আপনার ব্যবসায় উন্নতি শুরু
করবেন। পড়াশোনার পাশাপাশি এই ব্যবসাটি একটি উপযুক্ত ব্যবসা বলে আমি মনে করি। কারণ
একটি ছাত্রের পক্ষে একটি বাগান তৈরি করা যথেষ্ট বুদ্ধিমানের কাজ কারণ এটা তার ধৈর্য
শক্তিকে বাড়াতে সাহায্য করে এবং মানসিক দৃঢ়তা বাড়াতে সাহায্য করে। পড়াশোনা থেকে
একটু ছাড় পেয়ে নিরিবিলিতে গাছের সঙ্গে সময় কাটানো একটি ছাত্রের পক্ষে যথেষ্ট উপকারী।
পাশাপাশি এই উপকার আপনাকে যদি টাকা উপার্জনের রাস্তা খুলে দেয় তাহলে মন্দ কিসে।
আজ আমি আপনাদের এই পাঁচটি ব্যবসার কথা জানালাম যা ছাত্র অবস্থায় আপনি করতে পারেন। এই ব্যবসা গুলি কোনোটিই আপনাকে আপনার পড়াশোনার ক্ষতি হতে দেবে না কারণ পড়াশোনার উন্নতির জন্যই আপনি ব্যবসা গুলি করবেন পাশাপাশি আপনার যথেষ্ট ভালো একটি উপার্জন আসবে এবং পড়াশোনার পর অনেক বড় একটি ব্যবসা আপনি দাঁড় করাতে পারবেন। এর আগে আমি আপনাদের জানিয়েছি অনলাইনে কিভাবে ইনকাম করা যায়, অল্প পুজিতে কিভাবে ইনকাম করা যায় সেগুলি আপনি একবার পড়ে দেখতে পারেন। লেখাটি ভালো লাগলে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না। আর কোন কোন ব্যবসা সম্পর্কে আপনি জানতে চান সেটিও আমাকে কমেন্টে লিখে জানাতে পারেন। আমি চেষ্টা করব সেই বিষয় গুলির উপর লেখার। ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন, ভালো রাখবেন নমস্কার।
আরো পড়ুন -
চাকরির পাশাপাশি করা যায় এমন পাঁচটি ব্যবসা।
কিভাবে ডোমিনোজ পিৎজার ফ্রাঞ্চাইজি নেওয়া যায়।
