আমরা প্রতিনিয়ত কিছুনা কিছু ব্যবসা করার জন্য ব্যবসার আইডিয়া খুঁজে থাকি। অনেকেরই ধারণা একটা ব্যবসা খুলতে গেলে প্রচুর টাকার প্রয়োজন, এই ধারণাটা সম্পূর্ণ ভুল. মনে রাখবেন ব্যবসা করতে গেলে টাকার থেকেও বড় বুদ্ধির প্রয়োজন। কারন একটা ভালো বিজনেস মডেল বিজনেস কে দাঁড় করানোর পেছনে সবথেকে বড় ভূমিকা রাখে। তাই সঠিক এবং ভালো বিজনেস মডেল যদি আপনি খুঁজে পান তাহলে আপনি কম পুজিতে ভাল ব্যবসা দাঁড় করাতে সক্ষম হবেন। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা যে ক'টি ব্যবসা সম্পর্কে জানব সেগুলিকে বুদ্ধি এবং কর্ম দক্ষতা প্রয়োগ করে আপনি একটা বড় ব্যবসার রূপ দিতে পারেন।
এখানে যে ব্যবসা গুলি আলোচনা করলাম বা করব সেগুলো কম পুঁজিতে কিছু লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া । অল্প পুঁজি দিয়ে এখন ব্যবসা গুলো শুরু করে ভবিষ্যতে এই ব্যবসা গুলোকে আরো অনেক বড় আকারে গড়ে তুলতে পারেন। আজকের এই প্রতিবেদনটি আমরা কম পুঁজিতে ব্যবসার আইডিয়া সম্পর্কে জেনে নিই।
প্রতিবেদনটি শুরু করার আগে বলবো আমাদের প্রতিবেদন গুলি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের ব্লগ পেজটিকে ফলো করতে ভুলবেন না এবং আপনার মূল্যবান মতামত আমাদের জানাতে ভুলবেন না
কাপড়ের ব্যবসা :
২ থেকে ৫ হাজারটাকা দিয়ে শুরু করতে পারেন ঘরে বসে কাপড়ের ব্যবসা। বড়োবাজার ,মর্গরাহাট, মেটিয়া ব্রুজ , শান্তিপুর থেকে নিজেই মাল তুলে ছোট আকারে ব্যবসা শুরু করতে পারেন। প্রথমেই বুঝে নিতে হবে আয়নার ব্যবসার মডেলটি কি। আপনাকে হোলসেলারদের কাছ থেকে কম দামে রেডিমেট গার্মেন্টস কিনতে হবে আর সেগুলিকে রিটেলে বিক্রি করতে হবে। এখানে সঠিক রিটেলার খুঁজে বের করা আপনার প্রধান কাজ। আপনি যত কমদামে প্রডাক্ট কিনতে পারবেন বিক্রি করে লাভ ততই বেশি করতে পারবেন। যেমন শান্তি পুর থেকে একটি হ্যান্ডলুম সারী পেয়ে যাবেন মাত্র ২০০ তাকাতে আর এটি বিক্রি করতে পারবেন ৮০০ থেকে ১২০০ টাকাতে।
তাই মার্কেট রিসার্চ করাটা যথেষ্ট জরুরি। বড়োবাজার ,মর্গরাহাট, মেটিয়া ব্রুজ , শান্তিপুর এবং কাপড়ের হাটে নিয়মিত যাতায়াত করতে হবে। সেখানকার দাম-দর সম্পর্কে জানতে হবে। খুঁজে বের করতে হবে সবথেকে সস্তায় কিন্তু ভালো প্রডাক্ট বা আর্টিকেল কোথায় পাওয়া যায়। এর পর আসবে বিক্রি।
প্রথমে আপনার পরিচিত ব্যক্তিদের কাছে বিক্রি শুরু করুন। আশপাশের দোকানদারদের দিতে পারেন। লোকাল মার্কেটে ভিজিট করতে হবে। অনলাইন মার্কেট ভুলে চলবেনা। আমাজান ,ফ্লিপ এর মতন ইকমার্স সাইট গুলিতে যুক্ত হতে হবে। এখানথেকেও সেল যথেষ্ট হবে। এছাড়াও ফেসবুক মার্কেট প্লেস ,সোশ্যালমিডিয়া মার্কেটিং এগুলি ভালোভাবে করতে পারলে সেল ও প্রফিট বেড়ে যাবে। ফেসবুক লাইভ করতে পারেন। আপনার পরিচিতি বাড়লে অন্যদের দিয়ে ব্যবসা শুরু করান। মাল আপনি দেবেন ব্যবসা তারা করবে। মুনাফা ভাগ করে নেবেন। এই ব্যবসা বড়ো হওয়ার সম্বাবনা অনেক বেশি।
*ছবিটি গুগল থেকে সংগৃহিত*
রিসেলিং :
আপনি খুব কম টাকা দিয়ে শুরুকরতে পারেন রিসেলিং এর ব্যবসা।সমস্ত প্রডাক্টের রিসেলিং করা যায় কিন্তু আজ আমি আপনাদের জানাবো ফার্নিচার রিসেলিং ব্যবসা সম্পর্কে। মাত্র ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকাদিয়ে এই ব্যবসা শুরু করা যায়। আপনাকে খোঁজ রাখতে হবে কবে ,কোথায় ,কে অফিস,বাড়ী ,দোকান ইত্যাদি ছেড়ে দিচ্ছে। তাদের আসবাব-পত্র সহ যা মাল কমদামে তারা ছেড়ে দিচ্ছে আপনি তা কিনেনিন।এবার তাকে মডিফাই করে আবার তা পুনরায় বেঁচে দিন। আপনি অনলাইনে খোঁজ করলে এরকম অনেক প্রডাক্ট পেয়ে যাবেন বা কিছু ফেসবুক গ্রূপের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যান যেখানে পুরাতন ফার্নিচারের ব্যবসা হয়। এখানেই কিনে এখানেই বিক্রি করতে পারবেন।
একবার পুরাতন ফার্নিচার কিনেনিলে এবার মোডিফিকেশন এর কাজ করতে হবে। আপনি নিজে জানলে ভালো তা নাহলে আপনি অন্যকাউকে দিয়ে এই মোডিফিকেশানের কাজ করিয়ে নিতে পারেন। এবার আসবে বিক্রি।
আপনি OLX বা Quicer এর মতন সাইট গুলিতে এই প্রডাক্ট গুলির এড দিতে পারেন। ফেসবুক মার্কেট প্লেস ও সোসাল মিডিয়া এড দিতে পারেন। অফলাইন ও অনলাইন দুদিকেই মার্কেটিং করতে হবে। কম পুঁজিতে এটি একটি দারুন ব্যবসা।
*ছবিটি গুগল থেকে সংগৃহিত*
পুরাতন বাইকের শোরুম :
পুরাতন বাইকের ব্যবসা একটি দারুণ ব্যবসা কারণ নতুন বাইকের দাম দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে এবং যে হারে প্রতিদিন বাইকের চাহিদা বাড়ছে এই দুটো সামঞ্জস্য রাখতে পুরাতন বাইক যদি ভালো কোয়ালিটির পাওয়া যায় প্রচুর মানুষ তা কিনতে চাই। পুরাতন বাইকের ব্যবসা করতে গেলে বাইক সম্পর্কে আপনার যথেষ্ট শিক্ষা থাকা দরকার। যখন আপনি পুরাতন বাইক কিনবেন বাইকের কন্ডিশন এবং বাইক ঠিক করতে কত টাকা খরচা হতে পারে , ব্যাপারগুলি ক্যালকুলেট করে নিতে হবে. বাইকের পেপার কেমন আছে সেগুলো রিনিউ করতে কেমন খরচ হতে পারে এই ব্যপারগুলো সমস্ত কিছু আগে থেকেই ক্যালকুলেশন করে নিতে হবে।
কথা থেকে জোগাড় করবেন পুরাতন বাইক ? বিভিন্ন মাধ্যম দিয়ে জোগাড় করতে পারেন পুরাতন বাইক। আপনার আশপাশে বাইকের সরুম ,বাইক সার্ভিস সেন্টার এদের সঙ্গে কথা বলে রাখতে পারেন। এছাড়াও ফেসবুকে অনেক গ্রুপ আছে যেখানে পুরাতন বাইক বিক্রি হয়ে থাকে। আবার সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আপনি জোগাড় করতে পারেন পুরাতন বাইক। এছাড়াও OLX বা quicker থেকে আপনি পুরাতন বাইক পেয়ে যাবেন। একটু অনলাইন ঘাটাঘাটি করলে আপনি প্রচুর বাইক পেয়ে যাবেন।
একবার পুরাতন বাইক পেয়ে গেলে এবার আপনার কাজ সেটিকে মডিফাই করা অর্থাৎ বাইকের যা যা প্রবলেম আছে তাকে ঠিক করানো।আপনার আশপাশের বাইক সার্ভিস সেন্টারের সঙ্গে কথা বলে রাখুন। আপনি যেহেতু প্রায় প্রতিদিন কাজ করবেন তাই তারা রেট যেন একটু কম নেয়। প্রত্যেকটি কাজ করতে হবে ,ঠিক করে ধুয়ে মুছে চকচকে করে তুলে বিক্রির যোগ্য করে তুলতে হবে।
এবার আপনার লাভ রেখে বাইকটিকে বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে। প্রচারের সবথেকে সহজ মাধ্যম সোশ্যাল মিডিয়া এড। ইনফুলেন্সার মার্কেটিং করতে পারেন। গুগল ও ফেইসবুক এড করতে পারেন। দারুন লাভ জনক একটা ব্যবসা।
*ছবিটি গুগল থেকে সংগৃহিত*
খাবার হোম ডেলিভারি :
কম পুঁজিতে করার মতো একটি দারুণ ব্যবসা খাবার হোম ডেলিভারি। খাবার হোম ডেলিভারি ব্যবসাটি আপনি নিজের বাড়িতে বসেই করতে পারেন। এটি দু রকম ভাবে করতে পারেন অর্থাৎ এই খাবার হোম ডেলিভারি বিজনেসের বিজনেস মডেল ২ রকম হতে পারে। আপনি খাবার তৈরি করে zomato ও swiggy-এর মতো ফুড ডেলিভারি app কোম্পানী গুলির সঙ্গে যুক্ত হয়ে আপনার খাবার বিক্রি করতে পারেন, আবার অন্যদিকে অফলাইনে অনেকেই খাবার অর্ডার দিয়ে খেতে চায়, তাদের সঙ্গে মাসিক চুক্তি করে আপনি এই ব্যবসা শুরু করতে পারেন। আবার আপনি এই দুটি মডেল একসাথে করতে পারেন।
খাবার হোম ডেলিভারির ব্যবসার চাহিদা আজ মার্কেটে অনেক বেশি। অনেকেই আছে খাবার রান্নার ঝুট ঝামেলার জন্য অর্ডার দিয়ে খেতে ভালোবাসেন, আবার অনেকেই কাজের সূত্রে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় গিয়ে বসবাস করে বলে রান্নার ঝামেলা রাখতে চায় না। তারা চায় অর্ডার দিয়ে বাড়ির মত কিছু খাবার খেতে। তাদেরকে হাতিয়ার করে আপনি আপনার ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
খাবার হোম ডেলিভারির ব্যবসা একটি দারুন লাভজনক ব্যবসা এখানে আপনাকে খাবার রেডি করে দোকানে বিক্রি করার কোন প্রয়োজন নেই। ঘরে বসেই আপনি করতে পারেন। যেহেতু দোকান নেওয়ার প্রয়োজন নেই বলে খরচা অনেক কমে যায় এবং খাবার প্রচুর না বানিয়ে অর্ডারের মত করে আপনি খাবার বানাতে পারেন। খাবার হোম ডেলিভারির ব্যবসা আপনি খুব অল্প পুজিতে খুলতে পারেন এবং এটা খুব লাভজনক ব্যবসা।
*ছবিটি গুগল থেকে সংগৃহিত*
বায়োফ্লেক্স পদ্ধতিতে মাছের চাষ :
বায়োফ্লেক্স পদ্ধতিতে মাছ চাষ বা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ-এর একটি দারুন লাভ জনক ব্যবসা। বায়োফ্লেক্স পদ্ধতিতে মাছ চাষ-এর ব্যবসাতে যদিও তুলনামূলকভাবে বেশি পরিমাণে টাকা লাগে তবুও এই ব্যবসাটি একটি দারুণ ব্যবসা।এই ব্যবসাটি করতে পারলে আপনি প্রচুর টাকা ইনকামের ব্যবসা চালু করতে পারবেন।
সাধারণত মাছ চাষ করতে গেলে কোন পুকুর বা ঝিলের প্রয়োজন হয়, কিন্তু এক্ষেত্রে পুকুর বা ঝিল কোনটার দরকার নেই। এটা সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ। এক্ষেত্রে জলের টেংক বানিয়ে সেই টেংকের মধ্যে মাছ চাষ করা হয় এবং এই মাছের চাহিদা বাজারে প্রচুর। যেহেতু পুকুর বা ঝিলের প্রয়োজন নেই তাই ইনভেস্টমেন্ট তুলনামূলকভাবে অনেক কম এবং প্রফিট অনেকটাই বেশি। পুকুরে মাছ চাষের ক্ষেত্রে অনেক প্রতিকূলতা আছে কিন্তু বায়োফ্লেক্স পদ্ধতিতে মাছ চাষের ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিকভাবে জলের পরীক্ষা থেকে শুরু করে সমস্ত কাজ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে হয় সেহেতু মাছের প্রজনন থেকে চাষ এবং মাছ এর মৃত্যুর হার অনেক কম থাকার জন্য অনেক বেশি লাভ হয়ে থাকে। প্রয়জনে আপনি বায়োফ্লেক্স পদ্ধতিতে মাছ চাষের ট্রেনিং নিয়ে নিতে পারেন।
বায়োফ্লোক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করতে পারলে আপনি যথেষ্ট ভালো একটি বিজনেস দাড় করাতে পারবেন।
*ছবিটি গুগল থেকে সংগৃহিত*
আরো পড়ুন
ভিডিও বানিয়ে প্রচুর ইনকাম করুন ।
করোকনাথ মুরগির চাষ একটি অতি লাভজনক ব্যবসা
১০০ টাকা দিয়ে কিভাবে সফল ব্যবসা শুরু করবেন।
কিছু দারুন লাভজনক ব্যবসা যা এখুনি শুরু করতে পারেন।
বাড়ির ছাদের উপর করা যায় এমন কিছু ব্যবসা
আমরা আজ এই প্রতিবেদন থেকে জানলাম অল্প পুঁজি দিয়ে কিভাবে বেশকিছু সুন্দর ব্যবসা করা যায়। যে ব্যবসা গুলো ভালোভাবে করতে পারলে ভবিষ্যতে অনেক বড় একটা স্টার্টআপ তৈরি হতে পারে। বন্ধুরা প্রতিবেদনটি ভালো লাগলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান মতামত জানাতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ।
