আজ আমরা এমন কিছু ব্যবসা নিয়ে আলোচনা করব যেগুলি অতি লাভজনক ব্যবসা এবং চিন্তাভাবনা না করে এখনই শুরু করতে পারেন। যে ব্যবসা গুলি করতে খুব বেশি টাকার প্রয়োজন নেই এবং খুব কম সময় ব্যয় করে একটু দক্ষতার সঙ্গে করতে পারলে এই ব্যবসা গুলি আপনাকে ভবিষ্যতে একটি বড় ব্যবসার রূপ নিয়ে দেখাতে সক্ষম হবে। এই ব্যবসা গুলি করতে গেলে খুব বেশি অভিজ্ঞতা আর দক্ষতার প্রয়োজন হয়না। একটু অনলাইনে পড়াশোনা বা রিসার্চ করে নিলেই এই ব্যবসা গুলো আপনি হামেশাই করতে পারেন।
যে ব্যবসা গুলো নিয়ে আজ আলোচনা করব সেগুলি খুব কম ইনভেস্টমেন্টে এবং কিছু কিছু ব্যবসাতে একদমই ইনভেস্টমেন্ট নেই বল্লেই চলে। এই ধরনের ব্যবসা ভবিষ্যতে আপনাকে একটা বড় ব্যবসা হয়ে দাঁড়াতে সক্ষম হবে।
আমাদের প্রতিবেদনগুলো আপনার যদি ভালো লেগে থাকে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন এবং আমাদের ব্লগ টি কে ফলো করতে ভুলবেন না। চলুন শুরু করা যাক আজকের প্রতিবেদন , কিছু দারুণ ব্যবসা যা এখনই আপনি শুরু করতে পারেন।
* অনলাইন ফুডডেলিভারী:
অনলাইন ফুড ডেলিভারীর ব্যবসা একটি কম পুঁজিতে দারুণ ব্যবসা। আপনি আপনার বাড়ি থেকেই এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন। এই ব্যবসার জন্য আপনার কোন দোকানের প্রয়োজন নেই। আপনি নিজের বাড়িতেই একটি সুন্দর রেসিপি তৈরি করে ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
একটু খোঁজ নিলে পেয়ে যাবেন এমন কিছু সংস্থা যারা আপনার হয়ে ফুড ডেলিভারি করে থাকে, যেমন Zomato, Swiggy, Foodpanda ইত্যাদি। এই কোম্পানী গুলির কাজ শুধুমাত্র ডেলিভারি করা। বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট এবং যারা ভাল মানের খাবার তৈরি করে তাদের সঙ্গে এরা যুক্ত হয়ে খাবার কাস্টোমারের বাড়ি পর্যন্ত ডেলিভারি করে থাকে। এখানে এই সুবিধাটা আপনাকে নিতে হবে , আপনাকে প্রথমেই এই সমস্ত ফুড ডেলিভারি কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত হয়ে যেতে হবে। এদের সঙ্গে অনলাইনের মাধ্যমে যুক্ত হতে পারেন অথবা আপনার আশেপাশে যারা এই ধরনের ব্যবসা করছে তাদের সঙ্গে কন্টাক করে আপনি এইসব কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন। প্রত্যেকটি কোম্পানির একটা এরিয়া ম্যানেজার থাকে সেই এরিয়া ম্যানেজারের নাম্বার জোগাড় করে তার সঙ্গে কথা বলে আপনি যুক্ত হতে পারেন।
আপনার খাবারের কোয়ালিটি এবং গুণগত মান এবং প্যাকেজিং সুন্দর করে পরিবেশন করে এগুলিকে ডেলিভারি করতে হবে। ফুড ডেলিভারি করে ভালো পরিমাণে অর্থ উপার্জন করা যায়। একটি রেস্টুরেন্ট যেমন একটি দোকানের পেছনে খরচা করে, সেই খরচা আপনার হবে না যদি আপনি বাড়িতে বসেই এ ধরনের ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
অনেকেই আছে ঘরের খাবার খেতে পছন্দ করে এবং ঘরের রান্নার মত টেস্ট খুঁজে থাকেন। আপনি যদি সে ধরনের কোনো খাবার রান্না করতে পারেন এবং তার একটি সুন্দর মেনু তৈরি করেন , এই সমস্ত ফুড ডেলিভারি কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত হয়ে এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন। অনলাইন ফুড ডেলিভারি একটি দারুণ ব্যবসা এবং একটি লাভজনক ব্যবসা বর্তমানে অনেকেই করছে এবং অনেকেই কিভাবে করতে হয় এটি জানে না বলে করতে পারছেন না, আপনি যদি মনোস্থির করে নেন যে অনলাইন ফুড ডেলিভারি তে আপনি আপনার ক্যারিয়ার তৈরি করবেন তাহলে একটু মার্কেট রিসার্চ করে নিন এবং কি কি খাবারের বানানো যায় সেগুলো নিয়ে একটু চিন্তা ভাবনা করে তারপরে নাবা উচিত।
আপনাকে প্রথমেই এফ.এফ.এস.সি. লাইসেন্স তৈরি করে নিতে হবে এবং একটি ট্রেড লাইসেন্স লাগবে এবং একটি কারেন্ট একাউন্ট লাগবে। এরপর আপনার খাবারের একটি মেনু রেডি করতে হবে। এরপর আপনাকে ফুড ডেলিভারি কোম্পানিগুলির এরিয়া ম্যানেজারের নাম্বার জোগাড় করতে হবে ব্যাস এবার আপনি শুরু করতে পারেন অনলাইন ফুড ডেলিভারীর ব্যবসা।
* ইকমার্স দোকান:
অনলাইন ই-কমার্স দোকান খুলে আপনি দারুন একটি স্টার্টআপ শুরু করতে পারেন। আপনি যে বিষয়ে খুব ভালো পারদর্শী যেমন হাতের কাজ, সফ্ট টয় , খেলনা তৈরি অথবা ছোটখাটো মেশিন কিনে যদি একটি সেলাইয়ের কাজ করতে পারেন, টি শার্ট তৈরি করতে ,পারেন কুর্তি চুরিদার তৈরি করতে পারেন এরকম যে কাজ আপনি জানেন সেই কাজ যদি আপনি খুব ভালোভাবে করতে পারেন তাহলে আপনার জন্য অনলাইন দুনিয়া কিছু রাস্তা খুলে দিয়েছে।
ই-কমার্স সাইট, যেগুলির মাধ্যমে আপনি আপনার তৈরি বস্তুগুলোকে অনলাইনে দোকান করে বিক্রি করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনাকে কোন দোকানের জন্য এক্সট্রা পয়সা খরচ করার দরকার নেই. আপনি নিজের ঘরে বা গোডাউনে বসে এই কাজগুলো করতে পারেন।
অনলাইনে প্রচুর কাস্টমার প্রতিদিন তাদের প্রিয় জিনিস গুলো খোঁজার জন্য বারবার এসে থাকে এই ই-কমার্স সাইট গুলিতে। এরকম ই-কমার্স দোকান খোলার জন্য খুব ভালো কিছু সাইট যেমন Flipkart, Amazon, Snapdeal এরকম অনেক কোম্পানি আছে যারা সুযোগ করে দিচ্ছে আপনাকে ই-কমার্সে ফ্রীতে একটি দোকান খোলার। এখানে ফ্রিতে দোকান খুলে আপনি আপনার প্রোডাক্ট গুলিকে লিস্টিং করে শুরু করতে পারেন আপনার অনলাইন ই-কমার্স এর দোকানের যাত্রা।
এক্ষেত্রে প্রথমেই আপনাকে একটি ট্রেড লাইসেন্স তৈরি করে নিতে হবে এবং যেহেতু আপনি অনলাইন ব্যবসা করছেন সেতু আপনাকে জি.এস.টি. তৈরি করে নিতে হবে। মাথায় রাখবেন অনলাইনে ব্যবসা করতে গেলে অবশ্যই আপনার জি.এস.টি. লাইসেন্স লাগবে এবং ট্রেড লাইসেন্স ও কারেন্ট একাউন্ট করে আপনি Amazon, Flipkart, Snapdeal ইত্যাদি কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।অনলাইনে তারা সুযোগ করে দিচ্ছে আপনাকে ফ্রীতে একটি ই-কমার্স সাইট খোলার এবং সেখানে প্রোডাক্টগুলো লিস্টিং করে আপনি আপনার ব্যবসা শুরু করে দিতে পারেন।
অনলাইনে ই কমার্স সাইট গুলি আপনার জন্য একটি টেলিকলার বা হেল্পিং হ্যান্ড দিয়ে দেবে, যিনি আপনার সঙ্গে সবসময় যোগাযোগ রাখবে।কিভাবে প্রোডাক্ট লিফটিং করতে হবে এবং কিভাবে সেল করতে হবে সে বিষয়ে এই কমার্স সাইট গুলি আপনাকে সম্পূর্ণ ফ্রীতে ট্রেনিং দিয়ে দেবে। তাই বন্ধুরা যদি আপনার কাছে এমন কোন প্রোডাক্ট থাকে যেগুলো আপনি অনলাইন দুনিয়ায় নিয়ে এসে বিক্রি করতে চাইছেন আজই শুরু করতে পারেন ই-কমার্স সাইট।এটি একটি লাভজনক ব্যবসা।
*অন্যের ব্যবসা আপনার ব্যবসা:
ব্যবসার জন্য যদি আপনার কাছে নিজস্ব কোন প্রোডাক্ট না থাকে বা আপনি চাইছেন আপনি কোন প্রোডাক্ট তৈরি করবেন না তা হলেও আপনি একটি দারুণ ব্যবসা শুরু করতে পারেন। অন্যের ব্যবসা থেকে মাল নিয়ে সম্পূর্ণ ফ্রিতে আপনি আপনার ব্যবসা শুরু করতে পারেন।এখানেই বুদ্ধির কাজ। এভাবে একটি নতুন স্টার্টআপ গোরে তুলতে পারেন। কীভাবে করবেন এই ব্যবসা?
প্রথমেই আপনাকে একটু খোঁজ নিতে হবে আপনার এরিয়াতে কি কি কারখানা আছে যেখানে মাল তৈরি করা হয় অর্থাৎ প্রোডাকশন হাউস। যেমন মনে করুন আপনার ওখানে নাইটির কারখানা আছে বা কুর্তি কারখানা আছে বা কোন খেলনা তৈরি হয়, জুতো তৈরি হয়, কাপড় তৈরি হয়, স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরি হয় ইত্যাদি। এই সমস্ত কারখানার সঙ্গে আপনাকে প্রথমে কন্টাক করতে হবে এবং এদের সঙ্গে কথা বলতে হবে তাদের মাল আপনি ডাইরেক্ট সেল করবেন অর্থাৎ আপনি অনলাইন দুনিয়াতে এই প্রোডাক্ট গুলো কে নিয়ে যাবেন এবং যদি কোন কন্টাক্ট আসে বা কেউ কেনার জন্য ইচ্ছা প্রকাশ করে আপনি সেই কন্টাক্টটি নিয়ে তাদেরকে ডেলিভারি করবেন এবং সেখান থেকে আপনি একটি কমিশন আপনি রাখবেন। এটা সম্পূর্ণ B2B বিজনেস হবে। অর্থাৎ বিজনেসম্যানরা আপনার কাছ থেকে বালকে প্রোডাক্ট নেওয়ার জন্য কন্টাক্ট করবে এবং আপনি কারখানা থেকে খুবই কম দামে তাদেরকেই প্রোডাক্ট গুলিকে সাপ্লাই করবেন, পরিবর্তে আপনি একটা কমিশন রেখে দেবেন। কমিশনের পরিমাণ যেন প্রথমেই খুব ছোট হয়, এতে আপনার পরিচিতি মার্কেটে অনেকটা বেড়ে যাবে।
এই কাজের সুযোগ অনলাইন দুনিয়ায় আমাদের কিছু কোম্পানি করে দেয় যেমন Alibaba, Indiamart ইত্যাদি। এখানে সম্পূর্ণ B2B ব্যবসা হয়ে থাকে। প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ ব্যবসাইরা তাদের পণ্য খোঁজ করে থাকে।
আপনার সঙ্গে যে সকল কারখানার কন্টাক হয়েছে সেই সমস্ত কারখানার প্রডাক্ট নিয়ে আপনি প্রথমে একটি প্রোফাইল তৈরি করে ফেলুন। প্রোফাইল তৈরি করে Alibaba, Indiamart মতো আরো কিছু কোম্পানি আছে যাদের সঙ্গে অনলাইনে যোগাযোগ করে আপনি আপনার সাইট ওপেন করে নিন। এক্ষেত্রে আপনি সম্পূর্ণ হেল্প পেয়ে যাবেন সমস্ত কোম্পানির কাছ থেকে এবং তারাই আপনাকে গাইড করে দেবে কিভাবে আপনাকে প্রডাক্ট লিস্টিং করতে হবে এবং সেল করতে হবে। ঐ অনলাইন প্লাটফর্ম-এ আপনার জন্য অর্ডার আসবে এবং কাস্টমার পেমেন্ট করলে আপনি কারখানা থেকে প্রোডাক্ট কাস্টমারকে পাঠিয়ে দিন। পরিবর্তে আপনি মোটা অংকের কমিশন ইনকাম করতে সমর্থ হবেন।
এটি একটি দারুণ ব্যবসা কারণ এখানে আপনার নিজস্ব কোনো প্রডাক্ট নেয় তবুও আপনি এখানে বালকে প্রোডাক্ট দিচ্ছেন। অন্যের প্রোডাক্ট নিয়ে আপনি অনলাইন দুনিয়ায় একটা দারুণ ব্যবসা তৈরি করতে পারেন। তাই বন্ধুরা যদি আপনার মনে ইচ্ছা থাকে আপনি একটা ভালো ব্যবসা করবেন তাহলে আজই লেগে পড়ুন এই ব্যবসাটিতে।
আরো পড়ুন
বাড়ির ছাদের উপর করা যায় এমন কিছু ব্যবসা
মোবাইলের দ্বারা কিভাবে ইনকাম করাযায়।
সেকেন্ডহ্যান্ড মোবাইলের ব্যবসা।
এখানে আমি নামমাত্র কয়েকটি উদাহরণ দিলাম এরকম অসংখ্য উদাহরণ হতে পারে, যেগুলো পরবর্তী কোন ব্লগে আমি নিয়ে আসবো। আজকের প্রতিবেদনটি কেমন লাগলো জানাতে ভুলবেননা ও আপনার মূল্যবান মতামত কমেন্ট করে জানাবেন। আর মাথায় রাখবেন একটি ব্যবসা করতে গেলে একটু বুদ্ধির প্রয়োজন এবং বুদ্ধি , খাটনি এবং একাগ্রতা রাখতে পারলে আপনি যেকোন ব্যবসা যেকোনো মূল্যে দাঁড় করাতে পারেন এবং তা থেকে যথেষ্ট ভালো একটি ইনকাম তৈরি করতে পারেন। তাই কাজে লেগে পড়ুন, যে বিষয়ে আপনার পারদর্শিতা আছে আর যে বিষয়ে আপনার ইন্টারেস্ট আছে সেই বিষয় নিয়ে অনলাইন দুনিয়ায় ব্যবসা শুরু করে দিন।একটি সুন্দর স্টার্টআপ শুরু করুন।ধন্যবাদ ,ভালো থাকবেন।