রিয়েল এস্টেট ব্যবসা কি কি ভাবে করবেন
রিয়েল এস্টেট ব্যবসার মার্কেট অনেক বড়। রিয়েল এস্টেট ব্যবসার একটা বড় অংশ ভারতের জিডিপিতে অংশগ্রহণ করে। এই ব্যবসা যেমন আপনি একদিকে অনেক বেশি টাকা ইনভেস্ট করে শুরু করতে পারেন আবার অন্যদিকে নামমাত্র টাকা দিও এই ব্যবসা শুরু করতে পারেন। রিয়েল এস্টেট ব্যবসার মার্কেট এবং চাহিদা অনেক বেশি হওয়ার দরুন এই ব্যবসাকে বড় করার সুযোগ অনেক বেশি। আজকের অনেক ধনকুবের একসময় রিয়েল এস্টেট ব্যবসা থেকেই উঠেছেন। রিয়েল এস্টেট ব্যবসা করার আগে আপনাকে জানতে হবে এই ব্যবসার খুঁটিনাটি। প্রপার্টি সম্পর্কে যথেষ্ট পরিমাণে জ্ঞান থাকা আপনার প্রয়োজন। রিয়েলএস্টেট ব্যবসা কিভাবে শুরু করবেন এবং কি কি উপায়ে এই ব্যবসা করা যায় তা সবিস্তারে আলোচনা করব।
* ইনভেস্টর:
আপনার কাছে যদি যথেষ্ট পরিমাণে টাকা থাকে আপনি একজন ইনভেস্টর হিসেবে এই ব্যবসা শুরু করতে পারেন। আপনি যে অঞ্চলের প্রপার্টিতে ইনভেস্ট করবেন সেই অঞ্চলের ভৌগোলিক জ্ঞান থাকা খুবই প্রয়োজন এবং কোন এলাকাতে প্রপার্টির কি দাম সেটা আগে থেকে জেনে রাখা দরকার। এবং কোন প্রপার্টি খুবই কম দামে কিনলে ভবিষ্যতে তা অনেক বেশি দামে বিক্রি করতে পারবেন সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। আপনি কমার্শিয়াল প্রপার্টি ও কিনতে পারেন। কমার্শিয়াল প্রপার্টির এক্সট্রা সুবিধা যতদিন না আপনি এই প্রোপার্টি বিক্রি করছেন ততদিন আপনি রেন্ট থেকে একটি টাকা ক্রমাগত ইনকাম করতে পারবেন। প্রপার্টি যখন বিক্রি করবেন লক্ষ্য রাখবেন যে দামে প্রপার্টি কিনেছিলেন বিক্রি করার সময় সেই দামের থেকে প্রতিবছর 10% থেকে 18% বেশি ইনকাম হচ্ছেকিনা । আপনার টাকা প্রপার্টিতে ইনভেস্ট করলে তা কখনোই নষ্ট হবে না বরঞ্চ সেই টাকা একসময় মোটা মুনাফা আপনাকে তুলে দেবে তাই যদি আপনার কাছে প্রপার্টিতে ইনভেস্ট করার মতো যথেষ্ট টাকা থাকে তাহলে বিভিন্ন প্রপার্টিতে ইনভেস্ট করতে পারেন। আপনি দোকান কিনতে পারেন এবং সেখান ভাড়া বসাতে পারেন। আপনি কম দামে জমি সমেত বাড়ি কিনে তার নামমাত্র মেরামত করে বেশি দামে বিক্রি করতে পারেন। আপনি খালি প্লট কিনে তাকে বাউন্ডারি দিয়ে ভবিষ্যতে বেশি দামে বিক্রি করতে পারেন। তবে প্রপার্টিতে ইনভেস্ট করার আগে লিগাল ডকুমেন্টের প্রতি নজর রাখবেন। লোভের বসে এসে এমন কোন প্রপার্টি কিনবেন না যার লিগাল ডকুমেন্টে-এ নামমাত্র খুদ আছে। প্রপার্টির ইনভেস্টর হিসেবে কাজ করে আপনি মোটা অংকের মুনাফা পেতে পারেন।
* প্রপার্টি ব্রোকার:
আপনার কাছে যদি একদমই টাকা না থাকে বা নামমাত্র টাকা থাকে তাহলে আপনি একজন প্রপার্টি ব্রোকার হিসেবে কাজ শুরু করতে পারেন। এক্ষেত্রে একটি ব্রোকারে লাইসেন্স আপনাকে বানিয়ে নিতে হবে। কিভাবে করবেন প্রপার্টি ব্রোকার ব্যবসা? আপনাকে একটু খোঁজখবর নিতে হবে আপনার অঞ্চলে কারা তার বাড়ি, ফ্ল্যাট, দোকান, গুদামঘর ইত্যাদি বিক্রি করতে চায়। আপনি যদি এই খোঁজ না পান তাহলে আপনি সোশ্যাল মিডিয়া থেকে এই খবর নিতে পারেন। বর্তমানে ফেসবুকে প্রচুর গ্রুপ আছে যারা এই বিষয়ের উপরে কাজ করছে, সেই গ্রুপগুলো জয়েন করে গেলে আপনি প্রতিনিয়ত জানতে পারবেন কারা তাদের প্রপার্টি বিক্রি করতে চায়। তাদেরকে আপনায় ফোন করতে হবে এবং জানতে হবে তিনি প্রপার্টির মালিক নাকি ব্রোকার। আপনাকে মালিকের খোঁজ বের করতে হবে, তাদের একটি লিস্ট করে তাদের কনভেন্স করাতে হবে যে তাদের প্রপার্টি আপনি বিক্রি করতে সাহায্য করবেন এবং তার বদলে আপনি ১% বা ২% কমিশন নেবেন। এবার আপনাকে সেই প্রপার্টি গুলির ভালো করে ছবি তুলে বা ভিডিও করে সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন গ্রুপ-এ আপনাকে ছাড়তে হবে। এখানে সবিস্তরে প্রপার্টি সম্পর্কে জানাতে হবে। এখান থেকেই আপনি ভালো পরিমাণ কাস্টমার পেয়ে যাবেন, বিক্রির সময় কাস্টমারকে আপনি জানিয়ে দেবেন আপনি কমিশন বাবদ ১% অথবা 2% কমিশন নেবেন। এভাবেই একটি প্রপার্টি ব্রোকার হিসাবে আপনি আপনার যাত্রা শুরু করতে পারেন। এখানে কোন ইনভেস্টমেন্ট এর দরকার নেই। পরবর্তীকালে প্রপার্টি গুলি কিছু সাইটে পয়সা দিয়ে এডভেটাইজ চালাতে পারেন, এতে আপনি আরো প্রচুর কাস্টমার পেয়ে যাবেন। এই ব্যবসা করে অনেকেই মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা ইনকাম করে ঘরে নিয়ে যায়। তাই যদি ব্যবসা করার জন্য যথেষ্ট পরিমাণএর টাকা আপনার কাছে না থাকে অথবা কম ইনভেস্টমেন্টে আপনি ব্যবসা করতে চান এই ব্যবসাটি আপনার জন্য উপযুক্ত।
* প্রপার্টিরেন্ট:
যদিও প্রপার্টি রেন্ট প্রপার্টি ব্রোকারির মধ্যেই পড়ে তবুও আমি এখানে আলাদা করে লিখলাম কারণ এটিকেও আপনি আলাদা একটি ব্যবসা হিসাবে চালাতে পারেন। আপনার এরিয়াতে যারা ঘর ভাড়া নিতে চায় বা দোকান ভাড়া নিতে চায় বা কোনো জমি লিজ নিতে চায় তাদের জন্য আপনি রেন্টাল ব্রোকার হিসাবে কাজ শুরু করতে পারেন। এক্ষেত্রে যখনই আপনি নতুন রেন্ট বসাবেন তখনই আপনি এক মাসের ভাড়া অগ্রিম পেয়ে যাবেন। এছাড়াও আপনাকে খোঁজ রাখতে হবে যারা প্রপার্টি রেন্টে দিতে চায় তাদের একটি লিস্ট বানিয়ে নেবেন। এই ব্যবসাটি ও আপনি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এর মাধ্যমে চালাতে পারেন অথবা পেট অ্যাড দিয়েও চালাতে পারেন। আপনি কি জানেন অনেকেই শুধুমাত্র প্রপার্টি রেন্ট করিয়ে প্রতিমাসে 50 হাজার থেকে 1 লক্ষ টাকা পর্যন্ত ইনকাম করছে। তাই যদি যথেষ্ট টাকা আপনার কাছে না থাকে আর আপনি একটি ব্যবসা চালু করতে চান তাহলে আপনি প্রপার্টি রেন্ট এর ব্যবসা করতে পারেন।
* প্রপার্টি ম্যানেজার:
আপনি একজন প্রপার্টি ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতে পারেন। প্রপার্টি ম্যানেজার কি রকম ব্যবসা? আমাদের আশেপাশে অনেকেই আছেন যারা বাড়ি, ফ্ল্যাট, জমি ইত্যাদি কিনে সেই স্থানে থাকেন না অথবা অনেকেই বিদেশে থাকেন, যাদের জমি-বাড়ি আপনার অঞ্চলেই আছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে তাদের প্রপার্টি দেখভালের দায়িত্ব আপনি নিতে পারেন। তাদের প্রপার্টি গুলোকে ঠিক সময়ে রেন্ট দেওয়া , প্রপার্টির ছোটখাটো কাজগুলো লোক লাগিয়েকরে করানো এই কাজগুলো করতে পারেন এর বদলে প্রপার্টি ওনারা আপনাকে প্রতি মাসে কিছু টাকা দেবেন। তাদের সঙ্গে আপনাকে একটি এগ্রিমেন্ট করে নিতে হবে, কার প্রপার্টিতে কিরকম রিকোয়ারমেন্ট আছে সে বিষয়ের উপরে আপনি আপনার চার্জ লাগাতে পারেন। এটি একটি নতুন এবং দারুণ ব্যবসা। অনেক এরিয়াতে এখনো পর্যন্ত এরকম ব্যবসা প্রায় কেউ করছে না বললেই চলে তাই কম্পিটিশন অনেকখানি কম। আপনি এই ব্যবসা শুরু করলে মাসে একটি মোটা অংকের টাকা ইনকাম করতে সমর্থ হবেন।
* সাবধানতা :
যে ব্যবসাটি আপনি করেন সে ব্যবসা সম্পর্কে আগে থেকে ভালোকরে জেনেনিতে হবে ।
লিগাল ডকুমেন্ট ও এগ্রিমেন্ট ভালো ভাবে বানাবেন, যাতে ভবিষ্যতে কোনো রকম সমস্যার সৃষ্টি না হয়।
এই ব্যবসা করতে গেলে আপনাকে সৎ থাকতে হবে কারন আপনার সততার জন্যই আরো অনেক মানুষ আপনার সঙ্গে কাজ করতে চাইবে।
প্রপার্টি নিয়ে আরো অনেক রকম ব্যবসা করা যেতে পারে, আমি এখানে চারটি বিষয় আপনাকে জানালাম। আজকের ব্লগ টি ভালো লাগলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। ধন্যবাদ।
আরো পড়ুন -